আশা
- Zisan Writes
- Sep 28, 2022
- 4 min read
রাত ৯ টা
ময়মনসিংহের নদীর পাড় সংলগ্ন একটা ওয়ান ওয়ে রোডে নরম ঘাসের উপর বসে আছি আমি আর আমার বন্ধু। পেছন দিয়ে মানুষ হেটে যাচ্ছে, সামনে নদী। পরিবেশ টা অন্ধকার ও আলোর মাঝামাঝি, তবে নীরবতা আছে। বেশ কিছুক্ষণ হলো কিছু অনুভব করছিনা, ও হ্যা। শুধু একটা গান শোনার চেষ্টা করছি, কিন্তু আমার বন্ধু যে খুব বেশি কথা বলে, আবার যার সাথে চলতেও ভাল্লাগে সে কথা বলেই যাচ্ছে। হালকা বিরক্তি লাগলেও এই ভেবে ভালো লাগছে ও আমায় মন খারাপ থাকতে দিচ্ছেনা। মানে কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতেই দিচ্ছেনা, কারণ আমার ২ মিনিট পরে পরে হলেও এক দুই শব্দের একটা করে কমেন্ট করা লাগবেই।
তবে আমার এই অন্ধকার পরিবেশে পাশে কাউকে রেখে এক সাথে গান শুনতে ইচ্ছা করছে, সমস্যা হলো ও ব্যান্ড সঙ্গিত শোনেনা, তবুও জোর করে কানে হ্যাড ফোনের একটা নব ঢুকিয়ে দিলাম, " নে শোন। গান টা শুনে মনে আশার আলো জ্বলে। "
নাম Asha by popeye
"
কি করি, কি করি, বলো কি করা যায়?
অলস এমন দিনে।
মনের যতো রঙ মিশে অজানায় শুধু সাড়া ফেলে,
তাই বুঝি আমি আকাশ দেখি,
কিছুই না ভেবে।
নিস্তব্ধতায় সবই যেন গভীর সাগরতলে।
এই বিষন্নতা আর কাটে না তো,
আমাকে ছেড়ে।
"
( কিছু কবিতা, গান আর উপন্যাস আছে দেখে মনে হয় এটা আমার লেখার কথা ছিল। এই গান টাও এমনি লাগছে, যদিও ৪-৫ মাস আগে শুনলে হয়তো এতো ভালো লাগত না)
বেশ, একটু নীরবতা। ভালো লাগছিল, যেন আমার নিজস্ব অনুভূতিতে কেউ নেমে এসেছে। আমাদের মত স্বল্প শিক্ষিত মানুষের এই ঝামেলা, জীবনে সব কিছু না হলেও কিছু অন্তত একটা আসল চায়, নিজের মত একটা মানুষ চায়। সে ক্ষেত্রে আমার দু-একটা বন্ধু কিছুটা আছে। যাদের কাছে গেলে মনে হয়, হ্যা। একে আমি চিনি, ও এখন কি ভাবছে আমি অনুভব করতে পারছি, আর যা অনুভব করছি তাই সঠিক। সারাদিন সবার থেকে নিজের অনুভূতি গুলো আড়াল করে এদের কাছে এলে শান্তি পাই। আসলে এমনি, অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে রাখতে এক সময় মানুষ গুলো পাথর হয়ে যায়, চাইলেও আর প্রকাশ করতে পারেনা। আর তখনি আশেপাশের মানুষ এদের ভূল বোঝে, ভাবে নিষ্ঠুর। আর আমি কখনোই এমন দলের কেউ হতে চাইনা, তাই বলি।
আবার যখন এমন কোন বন্ধু পাই যার ক্ষেত্রে, যার বিষয়ে যা ভাবি, যা অনুভব করি শেষে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তখন বুঝতে হবে আমরা কখনোই বন্ধু ছিলাম না, শুধু সময় আর প্রয়োজন আমাদের কিছু সময় এক রেখেছিল। তখন ওদের আশে পাশে মনে অশান্তি লাগে। আর যেখানে মনের অশান্তি, কিন্তু মনে হয় থাকি এমন যায়গায় থাকা যুক্তিযুক্ত না, কিন্তু সব কিছু তো লজিক দিয়ে ভাবা যায়না। যেমন আমিও কিছু বন্ধুর আশে পাশে ভালো অনুভব না করলেও চলি, কম চলি তবুও তো চলি। কিসের যেন মায়া পরে গেসে।
আমার ওই বন্ধু গুলো প্রয়োজন যাদের সাথে দিনে দুদিনে একবার হলেও কথা বলা প্রয়োজন, মনে হয় ওর কাছে নীরবে বসে থাকলেও সে আমায় বুঝে নিবে এবং কাধে হাত রেখে জানান দেবে পাশি আছে, চিন্তা নেই। সত্য বলতে পাশে থাকার প্রয়োজন নেই, অনেক সময় সামর্থও থাকেনা, কিন্তু মন মাঝে মাঝে এমন থাকে যে, খুব অন্ধকার একা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি, আশেপাশে অশরীরী পরিবেশ, হালকা ভয় করছে কী জানি কি ক্ষতি হয়ে যায়, ঠিক তখন যার বা যাদের কথা মাথায় আসে তারাই আপন, যদি তাদের একজনও দূর থেকে দাঁড়িয়ে থাকে মনে হয় না, আমি একা নই। কেউ আছে। আর কি আজিব! দিনে একবার হলেও মানুষের মন দূর্বল হয়, ভালোবাসা খোঁজে। আর তখন যদি কেউ যোগাযোগ করে জিজ্ঞাসা করে কেমন আছিস, দেখা করি ( তোকে মিস করতাসি) তখন কিন্তু মন্দ লাগেনা।
সময়ের স্রোতে গত ৫-৬ বছরে এমন বেশ কিছু বন্ধু পেয়েছি, তাই তাদের ২ ভাগে ভাগ করলাম। ১ ভাগ, সাময়িক, যতদিন সাথে ছিল ততদিন পাশে ছিল, একই রকম ভাইব পেয়েছি কিন্তু পরে যখন মনে হলো আমার সাথে ওর মনের মিল হচ্ছেনা, আমার যত ধারণা ছিল সব ভূল প্রমাণিত হচ্ছে তখনি সরে পড়তে হয়েছে। আর আরেক প্রকার হলো, সব সময়ই একই ভাইব এর ছিল, আজো। পরিবর্তন অনেক, আমাদের চিন্তা ভাবনাও পছন্দেরও কিন্তু কখনো মনে হয়নি ওর কাছে গেলে ফিরে আসতে হবে। ওকে আমি বুঝিনা, বা যা ধারণা করি ভূল, মনে হয়। শুধুই মনে হয় না, সে আমায় বুঝে নেমে।
আরেক ধরনের বন্ধুও আছে, এদের বধির বন্ধু বলে। কেমন? আমরা যতই বন্ধুত্ব দেখাইনা কেন, ওরা তা বোঝেনা। এটা এমন যে একটা অন্ধের সামনে নৃত্য করার মত। সে বুঝতে পারছে শুধু যে সামনে কেউ লাফালাফি করছে, প্রথমে সহ্য করলেও পরে বিরক্ত হবে, কারণ সে নাচ বোঝেনা তাই নাচের মূল্য দিতে পারেনা। এমন বন্ধুও পরিহারযোগ্য।
যাই হোক, জীবনের এক তৃতীয়াংশে এসে মনে হচ্ছে এখনো খুব কম জানি। আগামী ৫-৭ বছরে অনেক কিছুই হবে, অনেক ক্ষেত্রে আমার ধারণা ভূল প্রমাণ হবে, অনেক ক্ষেত্রে পারফেক্ট ভাইবের বন্ধু পাব। তবে পারফেক্ট বলতে খুব কমই কিছু আছে, কারণ আমরা কেউই একই মানসিকতার হইনা বা একই পরিস্থিতিতে থাকিনা। কিন্তু সামনের মানুষ টার পরিস্থিতি বুঝে রিয়েক্ট করাই বুঝি ওই সময়ের জন্য উপযুক্ত।
রাত ৯ঃ৩০
বন্ধুকে বললাম, পরিবেশ টা সুন্দর না। হালকা বাতাশ, নদীর ঐ বাড়ি ঘরের হালমা আলো, নদীর পানির ছলাং ছলাং শব্দ, রাস্তায় হেটে যাওয়া মানুষের ব্যস্ততা, আর আমাদের এখানে বসে জীবন থেকে ছুটি নেয়া মন্দ না। তাই না?
নে আরেকটা গান শোন।
"
স্বপ্ন দেখার খোলা চোখে
হয়না সাহস আর মনে
করি না কিছু পাওয়ার আশা
ব্যর্থ আমার প্রার্থনারা
"
গত দুদিন আগে ওর কিছু কথা অযুক্তিক লাগলেও এখন যৌক্তিক লাগছে, হয়তো মিশতে মিশতে মন একই লেভেলে চলে আসে অথবা পরিস্থিতি সাহায্য করে ঐ কথা গুলো অনুধাবন করতে।
সত্য বলতে আমার বন্ধু-বান্ধব আত্বীয় স্বজনের প্রতি খুব কম মায়া। তবে বছরে কবছরে কিছু মানুষ আসে জীবনে যারা দাগ ফেলে যায়, দাগ পড়তে পড়তে মায়া কমে গেছে। কথায় আছে যে বড় দাগের উপরে ছোট দাগ পড়তে তাতে কিছু আসে যায়না, সব এমনি তবুও কিছু সময় ভিন্ন হয়। আশা করি এখন যারা আছে, যাদের সামনে বসলে মনে হয় একে আমি চিনি, বুঝি তারা যেন অচেনা না হয়, তবে আবার সরতে হবে।
শেষে কিছু কবিতাংশঃ
আমরা নিসঙ্গতায় সঙ্গ খুজি,
নিজের মত মানুষ খুজি,
নিজের মত মানুষ বানাই,
খুব কাছে এলে, দূরে সরে গিয়ে আবার একলা হই।
আমরা এমনি, সঙ্গিহীন, সঙ্গহীন অথবা নিরুদ্দেশ;
যাই করি নাই করি, নিজের মত মানুষ খুজে জীবন পার করি।
২৩ সেপ্টেম্বর
תגובות