top of page

চিঠি যুগ,আবার আসুক

  • Writer: Zisan Writes
    Zisan Writes
  • Sep 2, 2022
  • 3 min read

রাত ৩ঃ৩০

শুক্রবার

মানুষ বলবে, ধূচ্ছাই। এই রাত জাগা গাজাখোরের লিখা পড়ব না। আচ্ছা, মেনে নিলাম।

যাই হোক, দেখলাম আজকে চিঠি দিবস। আর চিঠি মানেই আবেগ, আমি আবার খুব আবেগী মানুষ, শুনেছি জীবনে কিচ্ছু করতে পারব না, শুধু আবেগ বিক্রি করে খাব। হা হা হা। তাই ফ্রিতে কিছু আবেগ দিতে এসেছি, ফ্রি মার্কেটিং আরকি।


আচ্ছা, আপনি কখনো চিঠি পেয়েছেন কারো কাছ থেকে ? যদি উত্তর হয় " না" তবে আপনারও আমার মতই দূর্ভাগ্য। তবে আশা রাখবেন, মন থেকে চাইলে পাওয়া যায় এই কথা যদিও বিশ্বাস করিনা তবুও বলব, কেউ আপনার জন্য ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজের মত ইন্সট্যান্ট ভালোবাসায় না গিয়ে ধৈর্য ধরে চিঠি লিখবে। লাইন পছন্দ না হলে বার বার কাগজ ছিড়বে, পুরো ঘর ছেঁড়া কাগজে ভরে যাবে আর শেষে মনের মাধুরী মেশানো একটা চিঠি আপনি পাবেন, কিন্তু জানবেন না এই চিঠির পেছনে কত টা ভালোবাসা , কষ্ট আর ধৈর্য ছিল। আর আপনিই বা কেন আশায় থাকবেন ? নিজেই লিখে ফেললে সমস্যা কোথায় ? নাকি ৫-৬ ঘন্টা ইন্সট্যান্স ম্যাসেজে কথা বলে এমন একটা অনুভূতিই রাখতে চান, " কথা হইয়াও হইলোনা শেষ, সে বুঝেও বুঝিল না, ভালোবেসেও বাসিল না।" হা হা হা! এভাবেই তো চলছে, তাই বহুমাইল দূরত্ব, এক ম্যাসেজে ম্যাজিকের মত সম্পর্ক শুরু, আবার এক ম্যাসেজে ম্যাজিকের মত শেষ। হলোনা দেখা, হলোনা কথা শুধু হলো গন্ডোগোল।



Writing Letter
Writing Letter


আমার চিঠি বেশ ভালো লাগে। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা যায়, কিন্তু সর্বশেষে কোথায় যেন একটা শূন্যতা থেকে যায়। হাজার কথা হয়, ফলে কার কোন কথা ধরা হবে, কোন কথা নিয়ে ভাবা যাবে এমন কিছুই থাকেনা। কিন্তু চিঠির আনন্দ টা হলো ৫ লাইনের সেই চিঠিটাকেও বার বার দেখতে ইচ্ছা করে। মনে হয় প্রতিটা লাইনে হাজার অনুভূতি, হাজার কথা। অন্য রকম লাগে। জিনিস এটা এমন হলেই ভালোনা ? ১০০ টা ছবি দেখার চেয়ে অনেক দিন পর একবার দেখা ? অনেক কথার চেয়ে অল্প বলা কিনুত বুঝে নেয়া ? দেখলেন চিঠিতে কত ম্যাজিক।


আমার চিঠি পাওয়া ও দেয়ার বেশ কিছু অভিজ্ঞতা আছে। প্রথম চিঠি লিখেছিলাম এক বন্ধুকে। হ্যা, বন্ধু এবং ছেলে বন্ধু। হায়রে আমার নিষ্পাপ মন, হা হা। তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তাম, আমার এক কলিজার বন্ধু ছিল, সব সময় আমি আর ও এক সাথে চলতাম, যেহেতু বাসাও কাছে ছিল। তো আমার আবেগ সব সময়ই বেশি, তাই একদিন একটা চিঠি লিখে ফেলি ২ পেজের এবং বন্ধুকে দেই যে বাসায় গিয়ে পড়বি। ইসসস, কি লজ্জা। ও পড়ছিল এবং কি বলসিল এইটা ভূলে গেসি। হা হা হা। তবে মাঝে মাঝে বন্ধুকে বলবেন, দোস্ত তুই জোস, তুই অসাধারণ। কারো প্রসংশা করার মাঝে লজ্জা নেই, সম্পর্ক মজবুত হয়। আল্লাহ রহমতে আমার এমন বন্ধু সব সময়ই জীবনে ছিল, ভবিষ্যতেও পাব। তবে কেউ চিঠি দেয়না কেন ? ওপ্স, ভূলে গিয়েছিলাম, ওরাতো প্রেমিকাকেই চিঠি দেয়না, আমি আবার কোন মশা ?


এর পর বহু বছর কেটে গেছে, ক্লাস ৭-৮ এ হয়তো হবে, একজন কে প্রোপজাল করে চিঠি লিখেছিলাম এবং কি এর রিপ্লেও পেয়েছিলাম। যদিও রিজেকশনের চিঠি তবুও চিঠি তো। ঐ চিঠি টা বেশ ক-বছর রেখে দিয়েছিলাম পরে ইচ্ছাকৃত হারিয়ে ফেলেছি। উম, ধরতেই পারছেন আমি আমার চিঠি নিয়ে এক্সপেরিয়েন্স আছে এবং যাদের প্রতি আমার আবেগ তীব্র হয় তাদেরকেই একটা না একটা চিঠি দেই। তবে আফসোস টা হলো, আমার প্রথম প্রেমিকা আমার হাত থেকে প্রথম চিঠি পেল না ? নাকি প্রেম বার বার আসে, প্রথম বলে কিছু নেই, যে শেষ পর্যন্ত থাকে সেই প্রথম হয়ে যায় ? কীজানি, বড় হবার অনেকখানি বাকি।


তবে আমি এখনো চাইবো কেউ চিঠি দেক। হোক বন্ধুত্বের, জন্ম দিনের, ভালোবাসার। এই ব্যস্ত জীবনে, হাতের ফোন রেখে ২ দন্ড বসে ভেবে কেউ ২ লাইন যদি লেখে তবে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবাটাই উচিত। তবে বড় হবার সাথে সাথে সবার অনুভূতি কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে যায়, চিঠি লিখাকে কেমন একটা বাচ্চামো ভাবে। তাঁরা ভূলে যায়, অনুভূতির কোন বয়স থাকেনা। এই নিয়ে আমার এক কল্পণা না বললেই না।


" আমি চাইবো আমায় কেউ একটা চিঠি দেক। খুব সাদা মাটা এক কাগজে, বাসার সবার থেকে লুকিয়ে চিঠি লিখুক। মা, বড় বোন কিছুক্ষণ পর পর ঘরে উকি দেয়ার সাথে সাথে চিঠি টা লুকিয়ে ফেলুক। একটা চিঠি লিখতে গিয়ে হাজার কথা ভাবুক, পুরো দিস্তা নষ্ট হোক। শেষ চিঠিটা বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখুক, তার ঘাম চিঠিতে লেগে নতুন এক সুঘ্রাণ বের হোক। তারপর খুব যত্ন করে খামে ভরে, নীল শাড়ি পড়ে, কপালে টিপ ও চুরি পড়ে দেখা করতে আসুক। মায়াবী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকুক। তারপর খুব হাটুক, এক সাথে। ফুচকা কাড়াকাড়ি নিয়ে খুনসুটি হোক। ঠিক সন্ধ্যা নামার আগে চিঠিটা দিয়ে বলুক, " বাসায় গিয়ে পড়বা। উত্তরের অপেক্ষায় থাকব। কেমন ?", আমি এক বোকা যুবক চিঠি নিয়ে চুপটি করে এসে ঘুমিয়ে পড়ব।

হা হা হা। খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী আমার আশা, এই গুণ গুলো কারো মাঝে খুজেই পাইনা।


এছাড়া যারা চিঠি নিয়ে বাসায় ধরা খেয়েছেন তাদের জন্য সমবেদনা রইল। যদিও নতুন এক্সপেরিয়েন্সের মাঝ দিয়ে গিয়েছেন, লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া, কোথায় কিভাবে লুকালে কেউ জানবেনা সেটা ভাবা, চিঠির ঘ্রাণ নেয়া অসাধারণ ছিল সবই। আরো অসাধারণ হোক।


চিঠি দিবসের সবাইকে শুভেচ্ছা। যান্ত্রিকতা থেকে বেরিয়ে জীবন কে একটু সহজ করা উচিত।

Comments


  • Facebook
  • Twitter
  • Instagram
bottom of page